Thursday, 11 March 2010

গ্রীস থেকে রোম

শুরু হয়েছিল যা তা একদিন শেষ হবেই। গ্রীসের নাট্যতত্ত্ব গ্রীসের দর্শনকেই চিনিয়েছে। তেমনি গ্রীসের ভাষ্কর্য্য-ও এই অভ্যাসকেই চিহ্নিত করে। ভাষ্কর্য্য একটা জ্যামিতিতো বটেই। সেই জ্যামিতির কথা এবারে একটু বলতে হবে। তার আগে বলবো পিথাগোরাস-এর কথা।
পিথাগোরাস একটি চরিত্র যার শুরু বা শেষ আমাদের জানা নেই।জানা নেই আদৌ ওই মানুষটি ছিলেন কিনা!কিন্তু তার নামে একটি দর্শন প্রচলিত।সেই দর্শনের আগে মানুষটার সম্পর্কে একটু জেনে নিই।আমাদের তথ্যসুত্র এখানে হেরোডোটাস থেকে প্লেটো,অ্যারিস্টটল খুব সামান্য।বেশিটাই হলেন পিথাগোরাসের শিষ্য বলে পরিচিতরা।তাঁদের বলার মধ্যে অনেক অংশই বাদ দিতে হয় অসম্ভব বলে,তারপরেও যা থাকে তা খুব কম নয়।এঁদের একটি সংগঠন ছিল,সেটি একটি সঙ্ঘ,যা একাধারে রাজনৈতিক,সামাজিক আর ধর্মীয়।সেই সংগঠনকে প্রথমে ক্রোটোন(ইটালির ম্যাগনা গার্সিয়াতে)থেকে,তারপরে অন্যান্য শহর থেকে উৎখাত করা হয়। কারণ এদের জোর বেড়ে চলেছিল এবং অভিজাত এই সঙ্ঘে সকলের যেমন প্রবেশাধিকার ছিল না, তেমনি এরাই শহর শাসন নিয়ন্ত্রণ করতেন।অধিকতর গণতন্ত্রের দাবিকে এরা মানেন নি!ক্রোটোনে পিথাগোরাসকে তাঁর ভক্ত শিষ্যদের সঙ্গেই পুড়িয়ে মারা হয় বলে একটি দাবী রয়েছে।অন্যদিকে এ গল্পও আছে যে তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং প্রথমে তারেন্তুম,তারপরে সেখান থেকেও উৎখাত হয়ে মেটাপন্টুম-এ বসতি করেন।সেখানেই মারা যান।সিসেরো,রোমান অভিজাত ঐতিহাসিক,সেনেটর ও দর্শনচর্চাকারীকে সেখানে তাঁর কবর দেখানো হয়েছিল।
এই যে একাধারে দর্শন,শাসন আর গণিত সহ বিঞ্জান চর্চা এটা কোথাও প্লেটোকেও প্রভাবিত করে।তাঁর দার্শনিক রাজার ভাবনা এখান থেকেই পাওয়া বলেও ধারণা করা হয়।এমনিতেই তাঁর দর্শনে পিথাগোরাসের প্রভুত প্রভাব আছে।তার উপর গুরু সক্রেতিসের নিধনের জন্য গণতন্ত্রকে তিনি কোনদিনই সুনজরে দেখেন নি।পিথাগোরাসকেও কিন্তু গণতন্ত্রের দাবী তোলা মানুষদের হাতেই শেষ হতে হয়।এ সমাপতন হলেও প্রনিধানযোগ্য বটেই।আরেকটি বিষয় আমাদের নজরে আসা দরকার।গণিত বস্তুত প্লেটোরো খুব প্রিয়।আবার তিনি একমাত্র সংগীতের ক্ষেত্রেই কিছুটা ছাড় শিল্পকে দিয়েছিলেন।সেখানেই পিথাগোরিয়ানদের প্রভূত অবদান আছে।
কি অবদান?তার আগে একটু বিখ্যাত পিথাগোরিয়ান থিওরেম নিয়ে কয়েকটি কথা বলা দরকার।পিথাগোরাসের নামে এটা সিসেরো এবং প্লুটার্ক আনলেও এটা ব্যাবিলনিয় বা ভারতীয়রা ব্যবহার করতেন আগে থেকেই।একটি সমকোণী ত্রিভূজের সমকোণের বিপরীত বাহুটির বর্গফল, বাকী দুই বাহুর বর্গফলের সমান হবে। এটা পিথাগোরাস করেছেন এমন প্রমাণ নেই।বরং তিনি এককালে অনেক ভ্রমণ করেছেন বলে যে কাহিনী রয়েছে তাতে মিশর থেকে একে আনলেও বিচিত্র হোতোনা।কিন্তু এটাকে প্লেটোর শিষ্যরা প্রমাণে প্রতিষ্ঠা করেছেন পরে।অন্যদিকে ব্যাবিলনের কিউনিফর্মে, যার সবটা এখনো প্রকাশিত নয়,এর প্রমাণ দেখা যায়নি এখনো।এই পরোক্ষতাকেই প্রমাণ হিসেবে আপাতত মেনে নেওয়া হয়েছে আমদের পাঠ্যপুস্তকে।রমরম করে পিথাগোরাসের নামে এটি এখনো পড়ানো হয়ে থাকে।কি বিচিত্র!
সে যাই হোক।ফিরে আসি সংগীতে।প্রবাদ বলছে পিথাগোরাস একদিন একটি কামারশালার পাশ দিয়ে যেতে যেতে শোনেন সেখানে শব্দের একটা নির্দিষ্ট ছন্দ আছে।গিয়ে তিনি কামারের যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করে দ্যাখেন।সেই যন্ত্রের একটি আরেকটির ২/৩অংশ,আর অন্যটি আরেকটি যন্ত্রের ১/২ অংশ।এই সহজ বিভাজনই ওই অপুর্ব ধ্বনিসাম্যের কারণ।এটাই সিম্ফনির উৎস।পরবর্তি সময়ে অক্টেভের ধারণাতে এর অনস্বীকার্য্য প্রভাব আছে।
পিথাগোরানদের দুটি বিভাজন কাজ করত।তার একটি ভেতরের(Mathematikoi বা Learner) আর অন্যটি বাইরের(Akousmatikoi বা Listners)।নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে কি ভাবে চলত এটা!একদল শিখবেন ও আরেকদলকে শেখাবেন।শেখানোর পদ্ধতি শ্রুতি।ভারতের প্রাচীন পদ্ধতির সঙ্গে মিল পাওয়া যাচ্ছে এখানে!আসলে সব জায়গাতেই একই ভাবে শিক্ষার বিস্তার হয়েছে।সেটা মূলত ভয়ে!এ কথার ব্যাখ্যা আমি পরে দেব।এখানে দেখার কথা যে প্লেটোকেও যা প্রভাবিত করলো তা কি ভাবে কাজটা করলো!সেটা আমরা দেখবো এর পরে।তার থেকে আসা যাবে আমাদের আরেকটি মূল ভাবনায়।

No comments:

Post a Comment